
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
“যুদ্ধের সময় যোদ্ধা নিয়োগ বন্ধ রাখবেন না” এই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে মেডিকেল কলেজগুলোর স্থগিত ফাইনাল প্রফ মে’২০ পরীক্ষা দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত করবার দাবীতে মানববন্ধন করেছে মেডিকেল ফাইনাল প্রফ পরীক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৭ জুন) সকালে রাজধানীর বিজয়নগরে বিএমডিসি ভবনের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন প্রায় অর্ধশতাধিক পরীক্ষার্থী।
সম্প্রতি করোনা মহামারিতে আর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত মেডিকেল কলেজগুলোও বন্ধ রাখা হয়েছে যার ফলে আটকে আছে মে’২০ এর সব কয়টি প্রফই। তবে অন্য সব প্রফের তুলনায় ফাইনাল প্রফের বিষয়টি একটু আলাদা। মে’২০ এর প্রফটি মূলত বিগত নভেম্বর ২০১৯ এ ইতোমধ্যেই হয়ে যাওয়া ফাইনাল প্রফের সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা। অন্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার তুলনায় কম ছুটি, বেশি ক্লাস এবং ৬ মাস অন্তর নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে কৃতকার্যদের চিকিৎসক হওয়ার যে ধারা তা বিগত কয়েক বছরই মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থাকে রেখেছে সেশনজটবিহীন এবং হাসপাতালে রোগীদের সেবা প্রদানে ডাক্তার যোগান দেওয়াকে রেখেছে নিরবচ্ছিন্ন। তবে রোগীদের সবচেয়ে দুঃসময়টাতে চিকিৎসক তৈরির এ ধারা ব্যহত হলে শুধু দীর্ঘমেয়াদেই নয়, ইন্টার্ন ডাক্তার সংকট হতে চলেছে অতি আসন্ন।

মেডিকেল কলেজগুলোর তত্ত্বাবধায়ক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আসা নোটিশ অনুযায়ী, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্যে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে ফাইনাল প্রফ। মেডিকেলের নিয়ম অনুসারে ইতোমধ্যেই ৬ মাস পিছিয়ে যাওয়া ২৪০০ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত যাদের অন্য প্রফগুলোর মত কারিকুলাম সংশোধন করে এ ঘাটতি পূরণ করে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঠিক একইভাবে সেপ্টেম্বরের শুরুতেই বিগত বছর পাশ করে যাওয়া ইন্টার্ন ডাক্তারদের ইন্টার্নশিপ শেষ হয়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নতুন ইন্টার্ন পেতে ফাইনাল প্রফ ব্যতীত আর কোনো বিকল্প নেই।
ফাইনাল প্রফ যেহেতু ক্লিনিক্যাল নির্ভর পরীক্ষা তাই তা অনুষ্ঠিত করবার জন্যে অতীব দরকারী হাসপাতাল সারা বাংলাদেশেই করোনাকালীন সময়ে খোলা এবং নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছে। BSMMU এর নোটিশ অনুযায়ী এই বিপদসংকুল সময়েই Phase-A রেসিডেন্টদের ব্লক এন্ডিং পরীক্ষা পদ্ধতি সংশোধন করে শুধু রিটেন ও SCA এর মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে, পরবর্তী সেশনের ব্লক অনলাইনে নিতে নোটিশ জারি হয়েছে, চলে যাওয়া সময় পুষিয়ে নিতে কারিকুলাম সংক্ষেপের পরিকল্পনা জানানো হয়েছে।
এমনকি বিভিন্ন দেশে এই সংকটকালীন অবস্থায় কোনোভাবেই যেন ইন্টার্ন ডাক্তার ঘাটতি যাতে না হয় সেজন্যে পরীক্ষা পদ্ধতিও সংস্কার করা হয়েছে। এই সংকট নিরসনে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে যাবতীয় তথ্য উপাত্তসহ যোগাযোগ করলেও তারা আমাদের কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানাতে ব্যর্থ হয়।
উপরন্তু পরবর্তী সেশনগুলো নিয়ে তাদের ক্রমাগত পরিকল্পনা অব্যাহত দেখে অত্যন্ত দুঃখের সাথে ভাবতে বাধ্য হচ্ছি যে তারা আমাদের সেশন লস ও হাসপাতালে হতে যাওয়া অতি আসন্ন ইন্টার্ন ডাক্তারের এই ঘাটতি পূরণে পদক্ষেপ নিতে যথেষ্ট আন্তরিক নন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিনটি দাবীতে ১৭ জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানববন্ধন পালন করা হবে-
১। বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ এর ঐক্যমত তথা বিএমডিসির সার্বিক সহায়তায় অনতিবিলম্বে এমবিবিএস মে’২০ ফাইনাল প্রফ অনুষ্ঠিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ।
২। চলমান করোনা সংকট মোকাবেলায় দ্রুত আসন্ন ইন্টার্ন ঘাটতি পূরণে প্রয়োজনে পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্করণ ।
৩। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমাদন সংক্রান্ত জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা সমাধানে আপাতত মেডিকেলের কলেজের তত্ত্বাবধায়নে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ।
গত শনিবার (৬ জুন) এ বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করে পরীক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে করোনার ভয়াবহ অবস্থা চলতেছে। বুধবার (১৭ জুন) করোনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয় ৪ হাজার আট জন। মৃত্যু হয় ৪৩ জনের। করোনা মোকাবিলায় সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসকরা। এই যুদ্ধে সামিল হতে নতুন করে নেয়া হয়েছে ২ হাজার চিকিৎসক। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পুরণ করার শেষ ধাপে পৌঁছে গিয়েছিলেন তারা গত নভেম্বর মাসে। অংশ নিয়েছিলেন চুড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষায়। কিন্তু অল্পের জন্য ভাগ্য বঞ্চিত হন তারা। একটি বা দু’টি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে ছিটকে পড়েন তারা। তীরে এসে তরী ডুবে যায় তাদের।

তাদের বন্ধুরা এখন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক। সেবা দিচ্ছেন দেশের সবচেয়ে সংকটময় মুহুর্তে। কিন্তু এরা ঘরে বসে আছেন। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাপ্লিমেন্টারী পরীক্ষায় অংশ নেবার জন্য। চলতি মে মাসেই হবার কথা ছিল পরীক্ষা। কিন্তু করোনাকালে সেবা দেয়ার স্বপ্নটা অধরাই রয়ে গেল। করোনা মহামারিতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত মেডিকেল কলেজও বন্ধ রাখা হয়েছে। যার ফলে আটকে গেছে মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য সব কয়টি পেশাগত পরীক্ষা। সব পরীক্ষাই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চুড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষা একটু আলাদা। এই পরীক্ষা হলেই একধাপ চাকা ঘুরবে হাসপাতালগুলোর।